25 Nov 2024, 10:43 pm

বিএনপি রাজনৈতিক দল নয় সন্ত্রাসী সংগঠন ; এদের থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক :  আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ এবং জামায়াতকে ‘যুদ্ধাপরাধীদের দল’ আখ্যায়িত করে বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এদের থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিএনপি রাজনৈতিক দল নয়, সন্ত্রাসী দল, আর জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের দল। বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নকে সচল রাখার জন্যই বিএনপি-জামায়াত উভয়ের হাত থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে হবে।” এ সময় উন্নয়নের ধারা আব্যাহত রাখার জন্য তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী। ছয় জেলায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি আজ বিকেলে আওয়ামী লীগের তেজগাঁওস্থ কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুষ্টিয়ার পাবলিক লাইব্রেরি, ঝিনাইদহের উজির আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠ, সাতক্ষীরার সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নেত্রকোনার জেলা স্টেডিয়াম, রাঙ্গামাটি জেলার শেখ রাসেল স্টেডিয়াম এবং বরগুনা জেলার বামনা ও পাথরঘাটা উপজেলায় ভার্চুয়ালি সমাবেশে যোগ দেন। পরে এসব স্থানের উপস্থিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। জামাত যুদ্ধাপরাধীদের দল। এই সন্ত্রাসী এবং যুদ্ধাপরাধীদের থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে হবে। তাহলেই দেশে উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত থাকবে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপক্ষে এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, “দেশে উন্নয়নের ধারাটা তখনই অব্যাহত থাকবে, যখন নির্বাচনটা সুষ্ঠু হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তার মন মত প্রার্থী বেছে নেবে এবং গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত থাকবে। তাই আমার আবেদন থাকবে সকলের কাছে এই গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে। উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে এবং ধরে রাখতে হবে।” তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আমরা যেন আরও উন্নত সমৃদ্ধ করতে পারি, সেই প্রচেষ্টাটা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার ঘোষণা আমরা দিয়েছি। কাজেই আমাদের বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে আমরা আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে তুলব। জনগোষ্ঠী হবে স্মার্ট, আমাদের সরকার হবে স্মার্ট, অর্থনীতি হবে স্মার্ট এবং আমাদের সমাজ ব্যবস্থাও স্মার্ট হবে। আমরা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলবো, মাথা উঁচু করে চলবো। এটাই আমাদের লক্ষ্য।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে আমরা ছিনিমিনি খেলতে দেব না, এই কথাটা মনে রাখতে হবে। ওই সন্ত্রাসী বিএনপি এবং যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের হাতে এদেশ কোনদিনই নিরাপদ নয়। কারণ এরা এদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। কাজেই এদের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করে দেশের দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার আমি আহ্বান জানাচ্ছি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন,“আমরা সরকারে আসার পর ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত এই বাংলাদেশটা হচ্ছে- বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। মানুষের খাদ্যের কোন অভাব নেই, আজকে চিকিৎসাসেবা মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছি। সাক্ষরতার হার বেড়ে, আজ তা ৭৬ দশমিক ৮ ভাগে উন্নীত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই এবং বৃত্তি ও উপবৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি। রাস্তা-ঘাট-পুল ব্রীজ, অবকাঠানো তৈরী করে বাংলাদেশের যে অভুতপূর্ব উন্নয়ন ঘটিয়েছি, তা আপনারা নিজেরাই দেখেছেন।” তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তি করেছিলাম। এরপর পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন সাধন করি। একইদিনে সারাদেশে একসঙ্গে ‘শতসেত’ু উদ্বোধনের দিনে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে ৪৫টি ব্রীজ উদ্বোধন করি। রাস্তা-ঘাট করে দিয়েছি এবং এখন সেখানকার এলাকা শান্তির এবং নানারকম উন্নয়ন হচ্ছে। তিনি বলেন, সেই সাথে সাথে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা, এমনকি বরগুনা- যেটা সব থেকে অবহেলিত একটা জায়গা ছিল, সেখানে আজকে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। বরগুনা ও পটুয়াখালি সব মিলিয়ে পুরো বরিশাল বিভাগের চিত্র পাল্টে গেছে। সেখানেও এখন উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে এবং মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ঠিক এভাবে প্রত্যেকটি জায়গার আমরা উন্নয়ন করে গেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, “এই উন্নয়নের ধারাটিকে আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।” তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসে নাই। তারা নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৩ ও ১৪ সালে ঠিক যেমন অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল, আবারো সেই ভযংকর রুপ নিয়ে তারা নেমেছে। তাদের নেতা কে সেটাই প্রশ্ন। দু’জনেই তো সাজাপ্রাপ্ত। এতিমের অর্থ আত্মস্যাৎ এবং বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে আজকে খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামী। তার শারিরীক অবস্থার কথা বিবেচনা করে, তার বোন ও ভাই এবং পরিজনেরা আমাদের অনুরোধ করায়, তার সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার সুযোগ দিয়েছি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া, যারা আমাকে গ্রেনেড হামলা করে মারতে চেয়েছিল। বোমা পুঁতে রেখেছে, গুলি করেছে, ট্রেনে হামলা করেছে। তার পরেও তার (খালেদা জিয়া) জন্য আমরা এটুকু মানবিকতা দেখিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে তারেক জিয়া হাওয়া ভবন খুলে, সেটিকে একটি দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছিল। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ৫শ’ জায়গায় বোমা হামলা- আমাদের বহু নেতা-কর্মীকে তারা হত্যা করেছে। এরপর ২০০৭ সালে ‘ইমার্জেন্সি’ এলে আর কোনদিন ‘রাজনীতি’ ও ‘নির্বাচন’ করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে, দেশে থেকে পালিয়েছে। আর, এখন বিদেশ থেকে হুকুম জারি করছে- পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারার। তিনি বিএনপির যারা নেতা-কর্মী, যারা আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াচ্ছেন, পাপের ভাগীদার কিন্তু তারাই হবেন। তারেক জিয়ার কিছু হবে না। আওয়ামী লীগ সভাপতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে আরও বলেন, সেতো সেখানে (লন্ডন) বহাল তবিয়তেই আছে। জুয়া খেলে আরো অর্থ উপার্জন করছে। আর আপনাদের হুকুম দিচ্ছে, আপনারা তাতে নেমে পড়েছেন, সেটা কার জন্য? সে তো দেশেই আসে না। অসুস্থ মা’কেও একবার দেখতে আসে না।
২০১৩-১৪ এবং পরবর্তী সময়ে বিএনপি জামাতের সন্ত্রাসের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় বিএনপি রাস্তাঘাট কেটেছে, গাছ কেটেছে ৫৮২ টি স্কুল, ৭০ টি সরকারি অফিস, ছয়টি ভূমি অফিস এবং ৩২৫২টি গাড়ি, ২৯টি রেল, নয়টি লঞ্চ তারা আগুন দিয়ে পুড়িয়েছিল। তিনি বলেন, সেগুলো মেরামত করে আমরা আবার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এখন আবার তাদের সেই ভয়ঙ্কর রূপ! কাজেই এখন আমি সবাইকে বলব, যারা এই আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়- তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে। তিনি বলেন, “আপনারা দেখেছেন, মাত্র কয়েকদিন আগে রেলে আগুন দিল, ফিসপ্লেট খুলে ফেলল। রেলের বগি পুড়ে সেখানে একজন মানুষ মারা গেল। বাচ্চাকে বুকে আঁকড়ে ধরে থাকা মা ও শিশু আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেল। বাসে আগুন দিচ্ছে সেখানে ঘুমন্ত হেলপার আগুনে পুড়ে মারা গেল। কোন মানুষের মধ্যে মনুষত্ববোধ থাকলে, এগুলো তারা ঘটাতে পারেনা,”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের সাধারন মানুষকে এই যে হত্যা করা, এর প্রতিশোধ তারা নেবেই। তিনি বলেন, সামনে ইলেকশন। এই ইলেকশনটা আমরা এবার উন্মুক্ত করে দিয়েছি। কারন আমরা চাই, জনগণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। শান্তিমতো ভোট দিক। তিনি বলেন, সকলে জনগণের কাছে যাবেন। জনগণ যাকে ভোট দেবে, তিনিই নির্বাচিত হবেন। আমি চাই নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হোক। জনগণের যে ভোটের অধিকার, সেটা তারা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারুক।  গণতন্ত্রটাকে আমরা সুরক্ষিত করতে চাই। কারণ একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে, বিধি ব্যবস্থা থাকলে, দেশের যে উন্নতি হয়- বর্তমান দৃশ্যমান উন্নতি সেটারই প্রমাণ।
২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার পাঁচ বছর পরে যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করে, বাংলাদেশের ইতিহাসে সেই একবারই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়া বাংলাদেশে আর কোনদিনই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর হয়নি। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর, আমরা আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিতে পেরেছি। এটা ধরে রেখেই আমাদের সামনের দিকে এগোতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 14031
  • Total Visits: 1310818
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২৩শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১০:৪৩

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018